মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

চৈতন্য

চৈতন্য তথা চেতনা কি? বুদ্ধি ও চৈতন্য কি এক? আমরা এর উত্তর অন্বেষণের চেষ্টা করব। বুদ্ধি নির্ণয় করে কি করা উচিৎ এবং কোনটা করা উচিৎ নয়। বুদ্ধি আমাদের যুক্তি কপাটিকার মাধ্যমে নিজের সিদ্ধান্ত জানায়। অপর পক্ষে চেতনা তথা চৈতন্য আমাদের মনের অনুভূতির সৃষ্টি করে। আমরা অনুভব করতে পারি (we can feel) এবং এটি সতস্ফুর্ত। এর জন্য কোন চিন্তার প্রয়োজন হয় না। চৈতন্য এ ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বিন্দুতে বর্তমান। অর্থাৎ এই ব্রহ্মাণ্ড চৈতন্যময়। বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা একটা টান করা রবারের পর্দার উদাহরণ নিতে পারি বা ঢাকের চামড়ার উদাহরণ নিতে পারি। চামড়া বা রবারের পর্দার কোন এক বিন্দুতে একটু টোকা মারলে বা আঁচড় কাটলে পর্দার সমস্ত অংশেই ঐ টোকা বা আঁচড়ের প্রভাব দেখা যায়। এ বিশ্বকে আমরা ঐ টান করা রবারের চাদরের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। এ ব্রহ্মাণ্ডের যেকোন বিন্দুতে সৃষ্ট সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর যেকোন আলোড়নই টান করা চাদরের মতো বিশ্বের প্রতিটি কোনায় তার প্রভাব বিস্তার করে। চেতনা তথা চৈতন্য হল ঐ টান করা চাদর যা বিশ্বব্যাপী অখণ্ডভাবে বিরজমান। আমরা প্রত্যেকেই কম বেশি এই চৈতন্য স্বরূপার এক এক প্রকাশ অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ চেতনা শক্তির অধিকারী। 
ঈশক্রিয়া হল এই টান করা চাদরের উপর এক একটি টোকা যা বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব বিস্তার করে। বলা হয়েছে এই বিশ্বের প্রতিটি ঘটনা অপর কোন ঘটনার সাথে কার্য-কারণ সম্পর্কে আবদ্ধ। অর্থাৎ সমস্ত ঘটনাবলী অনেকাংশে পূর্ব নির্ধারিত এবং সমস্ত ঘটনাবলীই অনেকাংশে পূর্বাভাস যোগ্য। এখানে 'অনেকাংশে' বলার কারণ ঈশক্রিয়া। ঈশিক্রিয়াই কোন ঘটনাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। তবে আমরা যাকে ঈশক্রিয়া বলছি অর্থাৎ স্বপ্রনদিত কার্য (কারণ বিহীন)  তাও অপর কোন সূক্ষ্মতর কারণের কার্য। অর্থাৎ সমস্ত ঈশক্রিয়াই হল কোন এক পরম ইচ্ছার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। 
তবে এ বিশ্ব অবশ্যই দ্বিমাত্রিক নয়। তাই টান করা চাদরের উদাহরণ কেবল উপমা মাত্র। যে উপমাই আমরা গ্রহণ করি না কেন - বিশ্বের যেকোন প্রান্তে ঘটে যাওয়া সূক্ষ্মতম আলোড়নও বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব বিস্তার করে। বিশ্বব্যাপী বিরাজমান এই গুণাতীত সত্তাকেই আমরা স্বয়ং চৈতন্য স্বরূপা বলছি যা তরঙ্গবৎ সর্বব্যাপী বিদ্যমান। চৌম্বক বলরেখা যেমন কোন পদার্থের উপস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত হয় - যেকোন সামান্য ভরও বিশ্বব্যাপী চৌম্বক আবেশরেখা তথা বলরেখার আকৃতিকে পরিবর্তন করতে পারে - তেমনই চৈতন্য স্বরূপা এই নির্গুণ সত্তাও যেকোন শুভাশুভ কর্মের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রভাবিত হয়। যে প্রাণী যত বেশী এইরূপ চেতনাশক্তির অধিকারী তাকে তত বেশী চেতন যুক্ত আমরা বলে থাকি। আমরা এই চেতনা শক্তিকে বিশ্বব্যাপী তরঙ্গবৎ বিরাজমান বলে গ্রহণ করেছি। এটাই আমাদের স্বিকার্য। এই স্বিকার্যের সাহায্যেই আমরা পরবর্তীতে এই বিশ্বের নানা ঘটনাবলীকে ব্যাখ্যা করতে সমর্থ্য হব। 
অনুসিদ্ধান্তঃ
--> চৌম্বক আবেশ রেখার ন্যায় বিশ্বব্যাপী চৈতন্য যেকোন শুভাশুভ কর্মের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রভানিত হয়। যেমন করে কোন তন্ত্রে (system-এ) ঘটে যাওয়া যেকোন সূক্ষ্মতম শুভাশুভ কর্মও সমগ্র system বা তন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে।
--> তুমি হাসলে আমিও হাসি, তুমি কাঁদলে আমিও দুঃখ পাই, তুমি যখন আনন্দে উচ্ছল হয়ে ওঠো তা আমাকেও নাড়া দেয়। তরঙ্গবৎ চৈতন্যশক্তির অনুনাদই এর কারণ। 
--> ঈশক্রিয়া রূপে এই তরঙ্গের স্রষ্টা স্বয়ং প্রাণ, প্রতিটি প্রাণী তথা চেতনে যার প্রকাশ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন