শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২

 

ভারতীয় সভ্যতার সংকট, সুরক্ষা ও বিকাশ

যখন আমি এই প্রতিবেদনটি লিখতে বসেছি, তখন প্রায় সপ্তাহ দুয়েক অতিবাহিত যখন নূপুর শর্মার তথাকথিত টিপ্পনীর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের উপর বিশ্বের মুসলিম সমাজের কূট দৃষ্টি নিমজ্জিত; এবং তৎসঙ্গে ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদের নামে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের হানি, অগ্নি সংযোগ, মানুষের হয়রানি ইত্যাদী সংবাদের শিরোনামে।

নূপুর শর্মা কোনো এক টিভি চ্যানেলে নবীজীর উদ্দেশ্যে কিছু কটাক্ষ করেছিলেন; তাও সেটি ছিল তাঁর প্রতিপক্ষ কর্তৃক তাঁর ইষ্ট দেবতার উপর পৌণপৌণিক কটুক্তির পর। এরপর – দেশে ও বিদেশের মুসলিম সমাজ ক্ষিপ্ত, অনেক মুসলিম দেশ কর্তৃক সাময়ীক ভাবে ভারতীয় পণ্যের বয়কট এবং একই ভাবে নূপুর শর্মার কঠিন শাস্তির দাবীতে ভারত সরকারকে নত করানোর জন্য চাপ। উপরন্তু দেশের নানা স্থানে নবীর অনুগামীদের পাথরবাজী, লুটতরাজ ইত্যাদী। এই দৃশ্য কোনো সভ্য সমাজের চিত্র নয়।পরিস্থিতি এমন যে বাক স্বাধীনতা, মুক্ত চিন্তা আজ কারারুদ্ধ। এমন তর্ক দেওয়া যেতেই পারে যে, বাক স্বাধীনতা – মুক্ত চিন্তার অর্থ অপরের বিশ্বাসে আঘাত দেওয়া নয়। কিন্তু ভেবে দেখার প্রয়োজন যে, যে বিষয়ে আমি আহত সে বিষয়ে আমিও অপরকে আহত করেছি। সামগ্রিক ভাবে আমাদের বিকাশের পথ রুদ্ধ হতে চলেছে।

কিন্তু কেন এমন হল। বলা হয় – শিক্ষা চেতনার বিকাশ ঘটায়। যদি মনে করি মাদ্রাসা শিক্ষা মুসলমানদের একাংশকে অন্ধকারে নিয়ে গেছে তাহলে অপরাংশ যারা মাদ্রাসা শিক্ষার বাইরে তারা কেন একই ভাবে এই অস্থিরতায় অংশ নিচ্ছেন। আসলে আমাদের দেশের শিক্ষা খাতে অনেক ব্যয় হলেও, শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োগ সঠিক ভাবে হয় নি।

আমাদের উচিত এমন এক সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা যা বহির্বিশ্বের যোগ্যতম মহানতাকে স্বীকার করার পাশাপাশি আমাদের আগামী নাগরিকদের মধ্যে জাতি তথা রাষ্ট্র প্রীতি, রাষ্ট্র গরিমা, জাতীয় স্বাভীমান জাগ্রত করবে। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের রাষ্ট্র চেতনা শুধু বইগুলোর মুখপত্রে বর্ণিত সংবিধানের প্রস্তাবনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

জাতীয় বীরগাথার এবং সভ্যতার গরীমা গাথার অবতারনাকে অনেকে গৈরিকীকরণ বলে কটাক্ষ করতেই পারেন। উত্তরে, গৈরিকীকরণ হলে ক্ষতি কি? গৈরিক তো ত্যাগের প্রতীক। অনেকে বলবেন অতীত ভারতে অনেক হিংসাও ঘটেছে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য কী – ত্যাগ, শান্তি ও বিকাশ। গেরুয়াকে তো আমাদের রাষ্ট্রধ্বজায় সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে।

রাজ নৈতিক ও আর্থ সামাজিক চাপে সমগ্র দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে উঠেছে এক দায় সারা শিক্ষা ব্যবস্থা। শুধুমাত্র যেনতেন প্রকারে ভালো পরিসংখ্যান দেখিয়েই দায় মুক্তি। একটি শিশু একটি মাটির তাল। তাকে যেভাবে তৈরি করবে সে সেভাবে তৈরি হবে। সুতরাং দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী কেবল এবং কেবলমাত্র আমাদের ভ্রান্ত শিক্ষা ব্যবস্থা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অতি সত্বর আমূল পরিবর্তন আবশ্যক।

কতকগুলি আশু কাঙ্খিত পরিবর্তন এখানে লিপিবাধ্য করলামঃ

১)জাতীয় শিক্ষা নীতির অধীনে সমগ্র দেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হবে তাতে জাতীয় গৌরব গাথা অধিক রূপে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

২)ভারতীয় শিল্প সংস্কৃতির জ্ঞান ও বীর গাথা জাতীয় গৌরব গাথার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

৩) মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে যাতে-

    i) ব্যক্তির ক্রমিক বিকাশের পরিসংখ্যান

    ii) সামাজিক ক্রমিক বিকাশের পরিসংখ্যান

    iii) জাতীয় ক্রমিক বিকাশের পরিসংখ্যান

এই তিনটি পরিসংখ্যানের মধ্যে সুষ্পষ্ট সামঞ্জস্য থাকে।

৪) যেহেতু আমাদের দেশ একটি বৈচিত্রময় দেশ এবং আমাদের সভ্যতার মূল সুর এক। এবং অন্তরের সেই সুরটি হল সনাতনী; এবং এই দেশ কোনোদিন কাউকে ফিরিয়ে দেয় নি – সেহেতু সকল ভাবনার ধারাকে মর্যাদা দেবার শিক্ষা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। তা শুধু সাধারণ শিক্ষায় নয় – সমস্ত রকম শিক্ষা ব্যবস্থাতেই তা গ্রহণ করতে হবে। মাদ্রাসা থেকে শুরু করে মিশনারীস সব শিক্ষা ব্যবস্থাতেই শুধু পরধর্ম সাহিষ্ণুতাই নয় পরধর্ম শ্রদ্ধার পাঠও প্রবর্তন করতে হবে।

৫) যেমন ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন হবে তেমনই নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে – প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের, জাতীয় পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি বোর্ডের মূল্যায়ন আবশ্যক।

৬) যেহেতু আমাদের দেশ একটি বৈচিত্রময় দেশ এবং দেশমাতৃকা অনেক বীরের জননী সেহেতু যাঁরা জাতীয় স্তরে দেশের জন্য অবদান রেখেছেন তারা দেশের যে অঞ্চল হতে বড় হয়েছেন, অঞ্চল ভিত্তিতে তাঁদের কাহিনী স্কুল পাঠ্যের অন্তর্ভূক্ত করা হোক।   

বুধবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২১

 

অহিংস না সহিংস - বুদ্ধ না কৃষ্ণ...

'অহিংসা পরম ধর্ম '। সকল ধর্ম তথা আদর্শের মধ্যে অহিংসাকে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে সর্বকালে - সর্বদেশে। ধর্ম আমাদের শিখিয়েছেন মানুষ তাঁর সর্বোচ্চ সত্যে উপনীত হতে পারে অহিংসার মাধ্যমেই। অহিংসাই জীবনের পরম প্রাপ্তির পথে সকল বাধা দূর করতে আমাদের সাহাহ্য করে। আমরা কোথা থেকে এসেছি - কোথায় যাব - আমাদের স্বরূপ কি? - মোক্ষ পিয়াসী মানুষ তাঁর সন্ধান পান। পরম সত্য লাভ করে তিনি পৃথিবীর সকল বন্ধন মুক্ত হন। মানুষের ষড় রিপু এই আত্ম জ্ঞান লাভের পথে প্রধান বাধা। কাম-ক্রোধ-লোভ-মদ-মোহ-মাৎসর্য এই ষড় রিপুই জন্ম দেয় হিংসার যা মানুষকে আত্মজ্ঞান লাভের পথ থেকে চ্যুত করে। এ কারণেই অহিংসাকে পরম ধর্ম মানা হয়েছে। উপনিষদে বলা হয়েছে ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা। এই ষড় রিপু যা এই সংসার জাত তা একান্ত রূপেই মিথ্যা। এই ষড় রিপুকে যিনি জয় করতে পারেন তিনিই সেই পরম সত্যে উপনীত হতে পারেন। তাই অহিংসাই ব্রত। যুগে যুগে নানা মনিষী এই অহংসারই বানী প্রচার করে গেছেন। আমরা সবসময় চেয়েছি এমন এক সমাজ ব্যবস্থা যেখানে কোন হিংসা থাকবে না - মানুষ সবাই সবাইকে ভাল বাসবে - সর্বদা শান্তি বিরাজ করবে - যেখানে কোন শোষণ থাকবে না। কিন্তু এ জগৎ বড়ই বিচিত্র। এখানে শোষণ আছে, (অপ}শাসন আছে, দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার আছে - আবার প্রেম আছে, মানবিক মূল্যবোধও আছে, আছে সুজলা-সুফলা-শষ্য-শ্যামলা প্রকৃতি। পশু-পক্ষিদের মধ্যেও আছে যেমন বাঘ-সিংহ-হায়নার মতো হিংস্র প্রাণী আবার হাতি-হরিণ-গোরুর মতো অতি শান্তি প্রিয় প্রাণীও। অর্থাৎ এ জগতে হিংসা ও অহিংসা উভয়েই সমান ভাবে বিদ্যমান। সবচেয়ে বড় কথা এই যে একটিকে বাদ দিলে অপরটির স্থায়িত্বও বিঘ্নের মুখে পড়ে। মানুষের কথাই ধরি। আমরা অহিংসার পূজারি। কিন্তু হিংসা ছাড়া এক মুহুর্তও কি আমরা চলতে পারি? আমাদের চলা ফেরায় - জীবন ধারনে - প্রতিটি কাজে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে আমরা কি প্রতি নিয়ত অসংখ্য প্রাণীর নিধনের কারণ হচ্ছি  না? তাহলে সন্মার্গ, পরম প্রাপ্তি তথা মোক্ষ লাভের পরম উপায় হলেও এই সংসারের চাকা সচল রাখতে প্রয়োজন হিংসারও। কিন্তু কিভাবে। হিংসা তো আমাদের চরম লক্ষ্য থেকে দূরে নিয়ে যায়। ধর্ম আমাদের এর পথ বলে দিয়েছেন পুরুষার্থে। পুরুষার্থকে চরিতার্থ করেই আমরা মোক্ষের পথে পা বারাতে পারি। ধর্ম-অর্থ-কাম ও মোক্ষ। ধর্মের পথে আমাদের চাহিদা ও নীতিকে পরিচালিত করে আমরা আমাদের মোক্ষ লাভের পথে এগোতে পারি। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ সেই কথাই বলেছেন। স্ব স্ব জাতি তাঁদের স্ব স্ব ধর্ম পালন করবেন। ব্রাহ্মণ যেমন বিদ্যার্জনে নিজেকে ব্যস্ত রাখবেন, তেমনই ক্ষত্রীয়ের কাজ স্বধর্ম পালন করে পূর্ণ নীতি অবলম্বন করে ধর্ম রক্ষার প্রয়োজনে যুদ্ধ হতে পিছপা না হওয়া। যুদ্ধে অংশ গ্রহণ তাঁর পুরুষার্থকে চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই। এখানে যুদ্ধ হল নীতি পূর্বক হিংসা তথা systemetic violence   অহিংসা থেকে চ্যুত হয়েও আমরা পুরুষার্থকে চরিতার্থ করে মোক্ষের পদপ্রার্থী। এ হল জগতের তথা সংসারের নিয়ম। যতই হোক আমরা বেঁচে থাকি এই সমাজেই এই সংসারেই।  তাই পূর্ণ সন্মার্গ  তথা অহিংসা আমাদের এই সংসারের বাইরে নিয়ে যায় - চরম উত্তরণের পথে। কিন্তু সভ্যতার বিকাশের ধারাকে গতিশীল রাখতে কিছু হিংসার সাহায্য আমাদের নিতেই হয়। ভগবান বুদ্ধ তাঁর অষ্টাঙ্গিক মার্গে নির্বাণ লাভের পথ দেখিয়েছেন। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন এই সভ্যতার বিকাশ - এক সুদৃঢ় সুস্থিত জগৎ সংসার। পুরুষার্থকে চরিতার্থ করেই যা সম্ভব। মহাত্মা গান্ধী তাঁর সত্যাগ্রহে সম্পূর্ণ অহিংস পথে জাতিয় আন্দোলনকে পরিচালিত করার পরামর্শ দিয়েছেন। এই নিয়ে বহু বিতর্ক থাকলেও আমাদেরও মনে রাখতে হবে ইংরেজদের বাহু বলের সামনে আমাদের প্রতিরোধ মূলক সংঘবদ্ধ হাতিয়ার রূপে তিনি অহিংসা ছাড়া আর কোন পথই পান নি। যদিও বাহুবলের প্রত্যুত্তরে বাহুবল তথা স্বধর্ম জাত বলই হল পুরুষার্থ  - সেই সময়ে জাতির কোন বাহু বল না থাকায় আত্মিক বলই ছিল তাঁর অস্ত্র। কিন্তু সেই সময়ে সমগ্র জাতি কি পূর্ণ সত্যাগ্রহের জন্য প্রস্তুত ছিল? অনেক ক্ষেত্রেই তিনি নানা গোষ্ঠীর সাথে নানা সমঝোতায় এসেছেন। দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রভাব মুক্ত হতে পারেন নি তিনি। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু জাতীর পুরুষার্থকে চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে বহির্বিশ্ব থেকে বাহু শক্তি অর্জন করে ইংরেজদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়েছিলেন। যদি প্রশ্ন তোলা হয়, বহির্বিশ্বের কাছ প্রাপ্ত সাহায্য জাতিকে কি পুনরায় নতুন সাম্রাজ্যবাদীর পিঞ্জরভূক্ত হবার দিকে ঠেলে দিত না? উত্তরে বলা যায় নেতাজী বহির্বিশ্ব থেকে যে বাহুশক্তি অর্জন করেছিলেন তার সৈনিক ছিলেন ভারতীয়রাই যারা নানা কারণে দেশের বাইরে যুক্ত ছিলেন। জাতির পুরুষার্থকে চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে যে বল ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রত ছিল দেশজ রসদের সাহায্য নিয়ে সেই বল একই ভাবে সেই আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধেও প্রযোজ্য হত। তাই এসম্বন্ধে দেশনায়ক পরিকল্পনাহীন ছিলেন একথা ভাবা অর্থহীন।

মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১

 

অহিংসা পরম ধর্ম?

বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। মনে হচ্ছে “অহিংসা পরম ধর্ম” – এই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে – আমরা তথা হিন্দুরা কি চীরকাল মার খেয়েই যাব? চোখ ফুটতেই দেখেছি ভারতের অভ্যন্তরে ও বাইরে নানা প্রেক্ষাপটে ভারতীয় সভ্যতার অসন্মান; কখনও জাতীয় পতাকার বা ভারতীয় দেব-দেবীর স্থান হয় মেঝের পাপোছে, আবার কখনও শিল্পের নামে দেব-দেবীর মণ্ডপ সাজানো হয় জুতো দিয়ে। ভারতীয় সভ্যতার অসন্মানের পালা বহুদিনের; বর্তমানে এই অসন্মান আশ্রদ্ধা এবং লাঞ্ছনা শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে মানবতার সীমাকে অতিক্রম করে বাধাহীন উন্মত্ত জন্তুর মতো নগ্নরূপে প্রকাশমান। আমরা কাঠ পুতুলের মতো শুধু দাঁড়িয়ে দেখছি। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে – এই বাংলার বুকে মাযের লাঞ্ছনা সীমা ছড়িয়েছেয়ে – সদ্য সমাপ্ত দূর্গোৎসবে। আমি নির্বাক, ভাষাহীন; তা বলে দুষ্কৃতীরা যেন আশ্বস্ত না হয় – অহিংসার নপুংশকতা দেখে। “অহিংসা পরম ধর্ম” – এই শিক্ষা আমাদের দেওয়া হয়েছে সেই ছোট বেলা থেকে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? সত্যিই কি মানবতায় হিংসার স্থান নেই?

আমাদের দেব-দেবীদের প্রায় প্রত্যেকের হাতেই কোন না কোন অস্ত্র বিদ্যমান; কেন? কেনই বা প্রতীক অস্ত্রে তাঁদের পূজা করা হয়? কেন? আসলে আমরা যা শিখে এসেছি তা অর্ধ সত্য। অহিংসা পরম ধর্ম সেখানেই যেখানে প্রেম, পূর্ণ – মানবতা চরম। পুরুষার্থের কথা স্মরণ করলে হিংসাকে স্থান দেওয়া হয়েছে ধর্মে – পুরুষার্থকে চরিতার্থ করেই – ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ। কেন? যুধিষ্ঠির যুদ্ধবীর হয়েও মুমুক্ষু ছিলেন না? এরকম অনেক ক্ষত্রিয়ের উদাহরণই আমরা পাই যাঁরা যুদ্ধ করেও মুমুক্ষু ছিলেন। ভগবানের বাণীই – যদি আমিও তোমাকে হনন করতে আসি – আমাকেও আঘাত করা তোমার কর্তব্য।

তবে আজকের দিনে নিরাপরাধের উপর আস্ফালনেই ক্ষাত্র বীর্যের প্রদর্শন হয়।

এই আস্ফালনকারী অমানবিক হিংস্র নগ্ন জন্তুর দল যখন সংখ্যায় অনেক তখন আমাদের করণীয় সম্পর্কে ভেবে দেখার প্রয়োজন।

আমরা জানি – একতাই বল। বর্তমান ঘটনাবালীর পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন রাষ্ট্রসংঘের দরজায় কড়াও নাড়ছে। কিন্তু এই আন্দোলন হচ্ছে বিক্ষিপ্ত। বাংলাদেশবাসী সংখ্যালঘু জনতা আজ ভুক্তভোগী; একতাবদ্ধ না হয়ে তাদের উপায় নেই। এপার বাংলায় বিক্ষিপ্ত কিছু আন্দোলন; যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট নয়। ভূমি – পৃথিবীর যে প্রান্তেরই হোক না কেন – মানুষের মানুষ হবার অধিকার হরণ করার অধিকার কারও নেই – তা স্বদেশের হোক বা বিদেশের। আর বাংলাদেশ তো আমার সোনার বাংলা..।

বাঙালী তথা ভারতবাসীর একতাবদ্ধ আন্দোলন – পুরুষার্থকে চরিতার্থ করার লক্ষ্যেই – প্রত্যেকে স্ব স্ব ধর্ম অনুযায়ী তার বিকাশ ঘটাক। জীবনের উদ্দেশ্যকে (অর্থ) এবং চাহিদাকে (কাম) সামনে রেখে মোক্ষকে পরমার্থ করে নিজ নিজ ধর্ম (স্বধর্ম) পালনই হোক আমাদের ব্রত।

রাজনীতির ফাঁদে পড়া বাঙালী, শুধুমাত্র ট্রেনে চেপে চাকরী করতে বা খুঁজতে যাওয়া বাঙালী আর তার্কিক অতি বুদ্ধিজীবী আত্ম হননকারী বাঙালীর স্বাভিমান জাগুক সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে।

আর ব্রাহ্মণকে যেন শপথ নিতে না হয় – “নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব; আনিব শান্তি শান্ত উদার”।  

রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১

 

শুভ্রর ভেদতত্ত্ব

 

“গাহি সাম্যের গান…। সংগচ্ছদ্ধ্বম সংবদাদ্ধ্বম সংবোমানমসি জানতম ...।“- সাম্যই গতি (পরিণতি)। আমরা সবাই এগিয়ে চলেছি সাম্যের দিকে। যেখানে অসাম্য সেখানেই পীড়ন – টেনশন। আমরা সকলেই চাই সাম্য – সমান হতে। কারণ সাম্যই যে গতি। কিন্তু আমরা জানি যে ভেদ না থাকলে চাকা ঘোরে না। উচ্চতার পার্থক্য না থাকলে জলের প্রবাহ হয় না। চাপের পার্থক্য না থাকলে বায়ু প্রবাহ হয় না। শূন্যস্থান না থাকলে পূরণের আর্তি জন্মায় না। কারখানায় উৎপাদন হয় না।  সভ্যতার চাকা সচল রয়েছে এই ভেদের উপরে। তাহলে সংসার তথা সভ্যতার প্রয়োজনে ভেদ প্রয়োজন। কিন্তু সাম্যই যে গতি ...। তাই কি ধরণের সাম্য আমরা চাই তা আমাদের ভাবার প্রয়োজন। আমরা এমন সাম্য চাই যেখানে ভেদ থাকবে কিন্তু সেই ভেদ মানুষকে বেদনা দেবে না। মানুষ প্রসন্ন চিত্তে এই ভেদকে সন্মান করবে।

কারণ ছাড়া কার্য হয় না। কর্মের মূলে কারণ। পদার্থ বিজ্ঞানে এই সত্য আমরা বারবার উপলব্ধি করেছি। কিন্তু পদার্থ তো স্থূল জগতের অংশ। পদার্থ বিজ্ঞানে আমরা দেখেছি কারণ যত স্থূল কর্মও তত স্থূল। যেমনঃ স্বল্প বল প্রয়োগে বস্তুর স্বল্প আন্দোলন; অধিক বল প্রয়োগে বস্তুর অধিক আন্দোলন। কারণকে সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর করলে যে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কর্মের উৎপত্তি ঘটে তা আমাদের দৃষ্টি গোচর নাও হতে পারে। আর সকলের দৃষ্টি তথা উপলব্ধি তো সমান নয়। তাই কারণ স্বরূপ সমস্ত ঘটনা সকলকে সমান ভাবে নাড়া দেয় না। আবার ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে নাড়া দেয়। জগতের কোনো ঘটনাই অলৌকিক নয়। শুধু বস্তুর জগতকে ব্যতি রেখে অধ্যাত্ম জগতের ঘটনাবলীকেও অলৌকিক বলা চলে না। অলৌকিক বলতে, যা লোকের বোধগম্য নয়। কোনো ব্যক্তির বিদ্যুতের সম্বন্ধে জ্ঞান না থাকলে বিদ্যুৎ তথা আলো বা কোনো বৈদ্যুতিন যন্ত্রের ক্রিয়াকে অলৌকিক বলে মনে হবে। আর কার্য কারণ সম্পর্কের মূলে আছে ভেদ। কার্য-কারণ সম্পর্ক সূক্ষ্ম হলে ভেদও সূক্ষ্ম। বিভিন্ন কারণের একতা বা সমন্বয় থাকলে তা কোনো বড় কার্যের কারণ হতে পারে। স্থূল জগতে বিভিন্ন সত্ত্বার মধ্যে একটা তাই অতি আবশ্যক। তাই একতাই বল। তা সমাজের প্রয়োজনে – রাষ্ট্রের প্রয়োজনে। তাই ভেদ যেমন প্রয়োজন একতাও তেমন প্রয়োজন। কিন্তু তুমি আমি ভেদ যুক্ত হয়েও এক হই কিভাবে।

তুমি মানুষ আমিও মানুষ। তোমার রক্ত লাল - আমার রক্তও লাল। তুমি আমি এক ভাষাতেই কথা বলি। তাই আমরা সমান – এক। কিন্তু তোমার দৃষ্টি আমার দৃষ্টি এক হলেও একটা ফুলকে তুমি একরকম ভাবে দেখো আমি দেখি আরেক রকম ভাবে। তাই ফুলটির মূল্য তোমার কাছে এক রকম আমার কাছে আরেক রকম।

একটি সহমতে আমাদের আসতেই হবে – ভেদ আমাদের প্রয়োজন। ভেদ ছাড়া সংসার অচল। কিন্তু সাম্যই গতি – শান্তি।

আজ আমাদের দেশ নানা ভেদে বিভক্ত – উচ্চ-নীচ, বড়-ছোট, তোমার অধিকার-আমার অধিকার। এই ভেদকে কেন্দ্র করেই আমরা হারিয়েছি আমাদের দেশের তথা আমাদের জন্মভূমির একটা বড় অংশ। বলাবাহুল্য পাকিস্তান-বাংলাদেশের উৎপত্তির কারণ এই ভেদ।  

সুতরাং আমরা দেখছি, যে ভেদ সংসারের চালিকা শক্তি সেই আবার কখনও ধ্বংসাত্মক রূপে সংসারের ক্ষতি সাধনে উদ্ধত।  তাই ভেদতত্ত্ব সঠিক প্রয়োগ আমাদের বাঞ্ছনিয়। এই প্রয়োগ হওয়া উচিৎ বিজ্ঞান ভিত্তিক। পদার্থ বিজ্ঞানে তথা বস্তু বিজ্ঞানের স্থূল কার্য -কারণ সম্পর্ককে ছাড়িয়ে আধ্যাত্ম জগতের সূক্ষ্ম কার্য কারণ সম্পর্ককের সাপেক্ষে আমাদের ভেদতত্বকে বাস্তুবায়িত করা প্রয়োজন। আধ্যাত্ম জগতের কথা এখানে বলার কারণ – এই ব্রহ্মাণ্ডের যত সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর কার্য-কারণ সম্বন্ধাবলী তা এই অধ্যাত্ম বিজ্ঞানেরই অন্তর্গত। এই জগতে সব কিছু সম্ভব – কোনো কিছুই অসম্ভব নয় – যদি সেই কারণ সলীলের কারণ অন্বেষণ করতে পার। কিন্তু আমরা চাই এক সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা যা স্থায়ী; মানুষের মূল্যবোধ, সঠিক ভেদ জ্ঞান তথা বিচার জ্ঞানের বিকাশ।

বৈদিক যুগের প্রাক্কালে “সেই এক সাথে চলব, এক কথা বলব, একই চিন্তা করব…” সুরের মাঝখান থেকে সামাজিক আমূল সংস্কারের মাধ্যমে সমাজে চতুর্বণের সৃষ্টি এমনই এক ভেদ তত্ত্বের প্রয়োগ। আমাদের সংহিতা এই ভেদ তত্ত্বের প্রয়োগ করেছেন এই চতুর্বর্ণের মধ্যে। হ্যা, ব্রাহ্মণ জ্ঞানার্জন এবং সমাজে জ্ঞানের আলো বিতরণে ব্রতী থাকবেন; তাঁর এই কাজে সুরক্ষা প্রদান করবেন ক্ষত্রীয়; বৈশ্য নেবেন তাদের ভরণ পোষণের দায়ীত্ব; শূদ্র্ দেবেন সেবা; আর সেবা কখনোই ছোটো কাজ নয়। ছোটো সেই, যে বা যারা সেবার মহত্বকে কলঙ্কিত করেছেন।

আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ – অধিক রূপে বলা চলে অপরা বিদ্যার যুগ। এই যুগে মানুষের চাহিদা ও আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের অঙ্গীকার নিয়ে অপরা বিদ্যা নানা রূপে অবতীর্ণ। যে ভেদ সভ্যতার গতিকে স্থিতিশীল, সুশৃংখলিত করে রেখেছিল তা অপরা বিদ্যার বিকাশে উদ্বায়ীত। আমাদের মনে রাখতে হবে বৈদিক যুগে, যে ভেদ সভ্যতাকে স্থিতিশীল ও গতিশীল করেছিল তার ভিত্তি ছিল পরা বিদ্যা; আর পরা বিদ্যার কারণেই অপরা বিদ্যার বিকাশ। বর্তমানে অপরা বিদ্যার বিকাশে চতুর্বর্ণের ভেদ লুপ্তপ্রায় হবার ফলে সভ্যতার ধ্বংসাত্মক দিক গুলি প্রকট। আজ চতুর্বর্ণের ভেদ আমরা মানি না। কিন্তু যখন কোনো ব্যক্তি জ্ঞান সাধনাকে নিজের জীবনের ব্রত করেন তিনি কি ব্রাহ্মণের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন না! এটা আমাদের অবশ্যই মানতে হবে – সব কাজ সকলের জন্য উপযুক্ত নয়। যিনি জ্ঞান সাধনায নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তিনি কখনোই জ্ঞানের বাণিজ্য করতে পারবেন না। বাণিজ্যে মন দিলে তিনি তার সাধনা থেকে চ্যূত হবেন। আবার যিনি ব্যবসায় পারদর্শী তার দ্বারা সাধনা চলবে না। ক্ষত্রীয় দেন সুরক্ষা। তবে আজ অপরা বিদ্যার যুগে ক্ষত্রীয়ের রাজ গুণ সুরক্ষা প্রদানের পরিবর্তে মানুষের ভীতি ও শোষণের কারণ। শক্তির আস্ফালন রূপেই তার প্রকাশ। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগে নানা ক্ষেত্রে যে পরিষেবা আমরা পাই – অ্যাকোয়া গার্ডের সার্ভিসিং থেকে শুরু করে বিমান সেবিকা, মাল্টিন্যাসনাল কোম্পানীর সেক্রেটারি থেকে কোনো সাইন্টিফিক প্রোজেক্টের সার্ভিস ইঙ্গিনীয়ার – তা তো শূদ্রেরই কাজ।

একথা স্পষ্ট – চতুর্বর্ণের ভেদ আমরা যেমন চাই না তেমনই সমাজে চতুর্বর্ণের তথা চার প্রকার নির্দিষ্ট গুণের প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করতে পারি না। এই চতুর্বর্ণের ভেদ আমরা যে চাই না তা একান্ত রূপেই অপরা বিদ্যার বিকাশের অবশ্যম্ভাবী ফল। চতুর্বর্ণের ভেদ লুপ্তপ্রায় হবার সাথে সাথে সমাজের নানা ব্যধি তথা মূল্যবোধের হানি – বর্ণ সংকর – দ্বেষ প্রভৃতি প্রকাশমান। সমাজ যখন ব্যধিগ্রস্ত, আর অপরা বিদ্যাই যখন এর কারণ তখন অপরা বিদ্যার বিকাশকে সঠিক দিশায় পরিচালনা করা একান্তরূপেই কাম্য। অপরা বিদ্যা তথা আধুনিক বিজ্ঞান চর্চাকে আমরা সঠিক দিশায় পরিচালনা করব। যা মানুষের মূল্যবোধের হানির কারণ হবে না। বিজ্ঞান দিয়ে যেমন যা খুশি তাই করা যায় তেমনই ভ্রষ্টাচার স্তব্ধও করা যায়। ভ্রষ্টাচার স্তব্ধ হলে সবাই সবার জায়গাটা উপলব্ধি করবেন।ব্রাহ্মণ যেমন আধিপত্য লাভের জন্য বা আধিক সম্পদ আহরণের জন্য ক্ষত্রীয় বা বৈশ্যের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন না শূদ্র যখন দেখবেন জ্ঞান সাধনায় ব্রতী ব্রাহ্মণের সম্পদের অধিকার শুধু অপরের দানেই সীমাবদ্ধ – ভিক্ষা অন্নে যিনি দিন নির্বাহ করেন – তখন তিনি অবশ্যই ব্রাহ্মণ হতে চাইবেন না।

 

অবশেষে তাঁর কথা স্মরণ করি যিনি সকলের চাহিদা তথা আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে নিজেকে সদা ব্যস্ত রাখেন – অজ্ঞানীকে জ্ঞান প্রদান করেন; শক্তিহীনকে শক্তি দেন; ধনহীনকে সম্পদের পথ বলে দেন – কিন্তু তিনি নিজে সর্বত্যাগী; বিস্ময়! তাঁর দান পাত্র কখনও শূন্য থাকে না।     

রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

 

অবতার তত্ত্ব

ঈশ্বর অবতার রূপে এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন বিভিন্ন সময়ে। এই কথা ব্যক্ত হয়েছে নানা ধর্ম গ্রন্থে। শ্রীরামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন এই রকম অবতার। আবার যিশুখ্রিস্টকেও ঈশ্বরের অবতার তথা ঈশ্বর পুত্র বলা হয়। এই অবতার এবং নানা দেবদেবীর বিষয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের ধারনা অস্পষ্ট। নানা সময়ে আমরা নানা দেবদেবীর পূজার্চনা করি আবার একই সাথে শ্রীরামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরামকৃষ্ণ এঁদের পূজাও করে থাকি। একটা কথা আমাদের স্মরণে রাখতে হবে - পূজা আমরা যেকোন সত্তাকেই করতে পারি। পূজার মাধ্যমে কোন সত্তাকে তুষ্ট করতে পারলে আশানুরূপ ফল লাভ করা যায়। আমর আমাদের লৌকিক জগতে যেমনটি দেখি ঠিক তেমনটিই। কোন প্রভবশালী ব্যক্তির সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আমরা যেমন তাঁর কৃপাধন্য হই; তার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত কৃপা (সুযোগ বা সুবিধা) লাভ করি ঠিক তেমনই ভাবে কোন দেবদেবীকে তুষ্ট করে আমরা অনুরূপ ফল লাভ করি। এখন, পরম জ্ঞান লাভ করতে গেলে, পরমেশ্বরের সাক্ষাত লাভ করতে গেলে যেমন ভক্তি যোগের প্রয়োজন তেমন জ্ঞান যোগ তথা বিচার পথেও তাঁকে লভ করা যায়। তবে যে পথই আমরা গ্রহণ করি না কেন তাঁর কৃপা ছারা তাঁকে লাভ করা অসাধ্য। যে পথই গ্রহণ করা হোক না কেন সাধক যদি আন্তরিক হন তবে ভগবান নিজেই তাঁকে পথ দেখিয়ে দেন।

অবতার এবং দেবদেবীর পার্থক্য করতে গেলে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে যে অবতার হলেন একজন ব্যক্তি যিনি এই পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছেন। মৃত্যুও তাঁর হবে এই জগতিক নিয়মেই। কিন্তু দেবত্ব হল নির্দিষ্ট কতক গুলি গুণ যা প্রকাশ পায় নানা ব্যক্তি তথা মানুষের মধ্যে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেবতা বলতে কোন সূক্ষ্ম শরীর ধারীকেই কল্পনা করা হয়েছে। আমাদের এই শরীর হল স্থূল। একে ধরা যায়, ছোঁয়া যায়, আঘাত করা যায়। সূক্ষ্ম শরীরকে কিন্তু ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না বা আঘাত করা যায় না। এই সূক্ষ্ম ও স্থূল শরীর বলতে আমরা কি বুঝবো। আমাদের এই শরীর হল স্থূল। এ আমাদের বোধগম্য। কিন্তু সূক্ষ্ম শরীর - তা কি? একথা প্রমাণিত - চৈতন্য সর্বব্যাপী। আর শক্তি প্রবাহের জন্য কোন মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। চৈতন্য রূপী যে বিশ্বব্যাপী কম্পন - নানা প্রকার সংস্কারের আবহে সে কম্পনের যে বদ্ধ প্রকাশ, তাই হল জীবাত্মা। কোন সূক্ষ্ম দেহ বলতে আমরা এইরূপ বদ্ধ চৈতন্য রূপ কম্পন রাশিকেই বুঝব। এই বদ্ধ চৈতন্য উপযুক্ত পরিবেশ পেলেই নিজেকে প্রকাশ করেন। তাই দেব দেবীরা কেউ মুক্ত নন। যাইহোক দেবদেবীরা তুষ্ট হলে তাঁরা তাঁদের ক্ষমতা অনুযায়ী অভীষ্ট ফল প্রদান করেন।

অপর পক্ষে অবতার কে? এখানে বলা প্রয়োজন পরম সত্য স্বরূপ পরমেশ্বর কিন্তু দেবদেবীদের মতো বদ্ধ চৈতন্য নন। তিনি মুক্ত, এক এবং অদ্বিতীয়। অদ্বৈত তত্ত্বে পরমাত্মা পরম চৈতন্য স্বরূপ হয়ে সর্বভূতে বিরাজমান। সর্বভূতে তিনিই - হাতিও নারায়ণ, মাহুতও নারায়ণ। তবে আমাদের হাতি নারায়ণের চেয়ে মাহুত নারায়ণের কথাই বেশি শোনা উচিৎ। উভয়েই নারায়ণ, কিন্তু হাতিতে তাঁর প্রকাশ কম, মাহুতে তাঁর প্রকাশ বেশী। এখানে, একটা কথা - এই 'প্রকাশ'। বিভিন্ন বস্তুতে তিনি বিভিন্ন ভাবে প্রকাশিত। অবতারে তিনি পূর্ণতর মাত্রায় প্রকাশিত, কোথাও কোথাও তিনি পূর্ণতম মাত্রায় প্রকাশিত। সাধারণ ভাবে আমরা দেখতে পাই কোন মানুষের বেশি ক্ষমতা ও দক্ষতা, কোন মানুষের কম। অর্থাৎ বিভিন্ন ব্যক্তিতে তিনি বিভিন্ন মাত্রায় প্রকাশিত। অবতারে তিনি অধিক পূর্ণরূপে প্রকাশিত। সব মানুষ সমান নয়। কিন্তু বীজে সবই এক। শুধু মানুষ নয় - বিভিন্ন প্রাণী, সূর্য-চন্দ্র সবই একই পরমেশ্বরের বিভিন্ন প্রকাশ।

শ্রীরামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণকে বলা হয় ভগবান বিষ্ণুর অবতার; শঙ্করাচার্যকে বলা হত নাকি তিনি শিবের অবতার। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর এই ত্রিদেব হলেন পরমাত্মার সত্যরজস্তম রূপ সাম্যের তিন প্রকাশ। দেব বলা হলেও অন্যান্য দেব দেবী অপেক্ষা তাঁরা অধিক মুক্ত এবং অনেকাংশে বলা চলে তাঁরা হলেন মুক্ত চৈতন্য। সৃষ্টির প্রয়োজনে সেই মুক্ত চৈতন্য নিজেকে প্রকাশ করেছেন ত্রিগুণাত্মক রূপ ভেদে। এখানে বিষ্ণু চৈতন্য সর্বাধিক প্রকাশিত হয়েছে শ্রীরামচন্দ্রে, শ্রীকৃষ্ণে। ঠিক তেমনই ভাবে শিব চৈতন্য পূর্ণতর রূপে প্রকাশিত হয়েছে শঙ্করাচার্যে।

রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭

দ্বৈত অদ্বৈত

দ্বৈত অর্থাৎ 'দুটি'। যারা একের অধিক সত্তায় বিশ্বাসী তাঁদের দ্বৈতবাদী বলা হয়। আমরা নানা দেব দেবীর পূজার্চনা করে থাকি। দেব দেবীকে তুষ্ট করে নিজেদের অভীষ্ট ফল প্রার্থনা করে থাকি। আবার যারা একেশ্বরবাদী তাঁরাও তাঁদের আরাধ্য দেবতার তথা ঈশ্বরের সাধন ভজন করেন। এ সবই হল দ্বৈত ভাবাত্মক। আমরা যে জড় জগতে বিচরণ করি যে জড় জগতে আমি তুমি বসবাস করি, তোমার সঙ্গে আমার মেলামেশা সবই দ্বৈত ভাবাত্মক। কারণ তুমি-আমি এক নই। এই জড় বিশ্বের সমস্ত বস্তুই দ্বৈত ভাবাত্মক - তোমার খাওয়া হলে আমার পেট ভরে না। তাহলে তুমি-আমি এক হই কি করে। বিজ্ঞান বলছে, যে জড় জগৎ আমরা দেখি তা প্রকৃত রূপে একই নির্গুণ সত্তা জাত। আমার সামনে যে বইটি রয়েছে, আমার হাতে যে ঘড়িটি রয়েছে - সবই সেই অসংখ্য অনু-পরমানুর নানা প্রকার সুবিন্যস্ত সমাহারের প্রকাশ। সেই অনু-পরমানু যার নির্মাণ কণা হল সেই ইলেক্ট্রন-প্রোটন-নিউট্রন। এই ইলেক্ট্রন-প্রোটন-নিউট্রন হল আবার একই মৌলিক কণা কোয়ার্ক জাত। তাই এ জগতের প্রতিটি জড় বস্তুই একই মৌলিক সত্তা হতে জাত। সুতরাং জর জগতের ক্ষেত্রে এই সুন্দর সৃষ্টি  শোভার নানারূপ দ্বৈত সত্তা অজ্ঞানতা পূর্ণ। কিন্তু জীব জগৎ!  আমি-তুমি - এই প্রাণী বা উদ্ভিদ জগতের দ্বৈততা? দ্বৈত না অদ্বৈত  - কোন সত্তা সঠিক এই নিয়ে বিচার বহু দিনের। তুমি আমি পৃথক ঠিকই। কিন্তু যখন দেখি তোমার খুশিতে আমার খুশি, তোমার দুঃখে আমার দুঃখ, তোমার আবেগ আমাকেও স্পর্শ করে তখন তুমি আমি এক হয়ে যাই। তখন কোথায় দ্বৈততা। হ্যাঁ, বিভেদ আছে। তোমার সঙ্গে আমার মেলে না অনেক সময়েই। তোমার-আমার নিত্য বিরোধ। কিন্তু যখন অজ্ঞানতা দূর হয়; তোমাকে আরও আরও বেশী জানি, তখন সেই মিল। হ্যাঁ, মিল খুঁজে পাই, একত্ব অনুভব করি - ঠিক। কিন্তু এক সত্তা, তা কিকরে হয়। ভারতীয় দর্শণ বলছেন, প্রাণ যার আছে তিনি প্রাণী। শরীরে যতক্ষণ প্রাণ আছে ততক্ষণ শরীর সচল। এই প্রাণ শরীর ত্যাগ করলেই এই শরীর জড়। অর্থাৎ প্রাণ শরীরের সাথে যুক্ত থেকে শরীরকে পরিচালনা করছে। যদিও বিজ্ঞানীর ভাষায় শরীরের নানা বিক্রিয়ার ফলেই নাকি শরীরে প্রাণের উদ্ভব (যার কোন প্রমাণ বিজ্ঞানী এখনো দিতে পারেন নি)। অদ্বৈতবাদী এইখানেই বিজ্ঞানীর যুক্তিকে খণ্ডন করেন। শরীরের নানা বিক্রিয়ায় যদি প্রাণের সৃষ্টি হত তাহলে কোন বিজ্ঞানী কেন এখনো কোন নতুন প্রাণী সৃষ্টি করতে পারলেন না। শরীরের নানা বিক্রিয়ায়ই যদি প্রাণের সৃষ্টি হয় তাহলে কেন তোমাকে আমি অনুভব করি। কেন এই একত্ব। শারীরিক বিক্রিয়ায় প্রাণের তত্ত্ব এগুলির কোন ব্যাখ্যা দিতে পারে না। অদ্বৈতবাদী বলেন এই প্রাণ অনত্ব এবং বিশ্বব্যাপী। সেই বিশ্বব্যাপী অনন্ত প্রাণের এক এক অপূর্ণ প্রকাশ হলাম আমরা - এই জীব জগৎ - মানুষ-পাহাড়-পশু-পাখি-চন্দ্র-সূর্য প্রভৃতি। এই মহাপ্রাণ তথা পরমাত্মাই নিজেকে প্রকাশ করেছেন এ সৃষ্টির প্রতিটি বিন্দুতে।
হ্যাঁ, এই প্রাণ জীবদেহ ত্যাগ করলেই জীব প্রাণহীন - জড়। একই প্রাণ চালিকা শক্তিরূপে প্রতিটি জীবকে সচল রেখেছে। বিভিন্ন জীবে তাঁর প্রকাশ ভিন্ন ভিন্ন। সুতরাং আমরা পেলাম এক প্রাণ এবং এক জড়। আর  বিজ্ঞান তো যেকোন জড়ের একই নির্গুণ সত্তার কথা আগেই স্বীকার করে নিয়েছে।
তাহলে এই প্রাণ ও জড় – এই দুই সত্তা আমাদের এই জীব জগৎ ও জড় জগৎ সৃষ্টির জন্য দায়ী। কিন্তু এই জড় জগৎ - তা তো প্রকৃতিরই সৃষ্টি। প্রকৃতিই সমস্ত জীব ও জড়ের লালন ও পালন কর্তৃ। আর আছেন বিশ্বব্যাপী অনন্ত প্রাণ তথা মহাপ্রাণ। যে দেব দেবীকে আমরা পূজা করি তা হল সেই বিশ্বব্যাপী অনন্ত প্রাণেরই এক এক প্রকাশ। এ কারণেই যেকোন বৈদিক পূজার্চনায় "যা দেবী সর্বভূতেষু...” , এই রূপ মন্ত্রে আমরা পূজা শুরু করি। যে দেব দেবীকেই আমরা পূজা করি তিনি এই সর্বভূতে বিরাজমান – এই হয় আমাদের স্তুতি বাক্য। অনেক ক্ষেত্রে এই প্রাণকে তথা মহাপ্রাণকে 'পুরুষ' বলা হয়েছে। পুরুষ ও প্রকৃতি দুটি পৃথক সত্তা মনে হলেও – এই দুই কখনোই দুটি পৃথক সত্তা নয়। তাই তো শিবের 'অর্ধনারীশ্বর' মূর্তির কল্পনা করা হয়েছে। পুরুষ ও প্রকৃতি, এই দুটি সত্তা পৃথক রূপে অবস্থান করছেন; পুরুষ-প্রকৃতি এই অবস্থান কিন্তু অনাদি কালের  নয়। প্রকৃতির এই অবস্থান পুরুষের প্রয়োজনেই। কার্যের যেমন কারণে লয় হয়, নির্দিষ্ট সময়ের অন্তে (কল্পান্তে) প্রকৃতি পুরুষে লীন হন। পুরুষ তথা পরমাত্মা মায়ার মধ্যে দিয়ে এই প্রকৃতি রচনা করেছেন। তাই পুরুষ ও প্রকৃতি দুটি পৃথক সত্তা নয়। জীবাত্মার ক্ষেত্রে তাই দেখা যায় এক প্রাণ যা সেই অনন্ত প্রাণের এক অপূর্ণ প্রকাশ; মন যা মায়া রূপে সেই প্রাণকে নানা কর্ম বাসনায় লিপ্ত রাখে এবং তনু বা এই স্হূল শরীর যার মাধ্যমে নানা কর্ম সম্পাদিত হয়।
যে জড় জগৎ আমরা দেখি , তাই তা হল পুরুষ তথা প্রাণেরই মায়ারূপ প্রকাশ, যা অনিত্য। কারণের অপসারণে যার লয় অবস্যম্ভাবী। মহাপ্রাণরূপ পরম কারণে তাই মায়ার প্রকাশ রূপ যেকোন সৃষ্টিকেই  লয় পেতে হয় কালের চক্রে।
তাই এ বিশ্ব চরাচরে একটি মাত্র সত্তাই বর্তমান যাকে আমরা নানা রূপে দেখে থাকি। যত দ্বৈত সত্তা আমরা দেখি তা আমাদের ইন্দ্রিয়ের সাপেক্ষে। অজ্ঞান দূর হলে ইন্দ্রিয় আর রজ্জুতে সর্প দর্শণ করে না। সর্বভূতে, সমস্ত জীবে অনন্ত প্রাণ রূপ একই সত্তাকে দর্শণ করে।

মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

চৈতন্য

চৈতন্য তথা চেতনা কি? বুদ্ধি ও চৈতন্য কি এক? আমরা এর উত্তর অন্বেষণের চেষ্টা করব। বুদ্ধি নির্ণয় করে কি করা উচিৎ এবং কোনটা করা উচিৎ নয়। বুদ্ধি আমাদের যুক্তি কপাটিকার মাধ্যমে নিজের সিদ্ধান্ত জানায়। অপর পক্ষে চেতনা তথা চৈতন্য আমাদের মনের অনুভূতির সৃষ্টি করে। আমরা অনুভব করতে পারি (we can feel) এবং এটি সতস্ফুর্ত। এর জন্য কোন চিন্তার প্রয়োজন হয় না। চৈতন্য এ ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বিন্দুতে বর্তমান। অর্থাৎ এই ব্রহ্মাণ্ড চৈতন্যময়। বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা একটা টান করা রবারের পর্দার উদাহরণ নিতে পারি বা ঢাকের চামড়ার উদাহরণ নিতে পারি। চামড়া বা রবারের পর্দার কোন এক বিন্দুতে একটু টোকা মারলে বা আঁচড় কাটলে পর্দার সমস্ত অংশেই ঐ টোকা বা আঁচড়ের প্রভাব দেখা যায়। এ বিশ্বকে আমরা ঐ টান করা রবারের চাদরের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। এ ব্রহ্মাণ্ডের যেকোন বিন্দুতে সৃষ্ট সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর যেকোন আলোড়নই টান করা চাদরের মতো বিশ্বের প্রতিটি কোনায় তার প্রভাব বিস্তার করে। চেতনা তথা চৈতন্য হল ঐ টান করা চাদর যা বিশ্বব্যাপী অখণ্ডভাবে বিরজমান। আমরা প্রত্যেকেই কম বেশি এই চৈতন্য স্বরূপার এক এক প্রকাশ অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ চেতনা শক্তির অধিকারী। 
ঈশক্রিয়া হল এই টান করা চাদরের উপর এক একটি টোকা যা বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব বিস্তার করে। বলা হয়েছে এই বিশ্বের প্রতিটি ঘটনা অপর কোন ঘটনার সাথে কার্য-কারণ সম্পর্কে আবদ্ধ। অর্থাৎ সমস্ত ঘটনাবলী অনেকাংশে পূর্ব নির্ধারিত এবং সমস্ত ঘটনাবলীই অনেকাংশে পূর্বাভাস যোগ্য। এখানে 'অনেকাংশে' বলার কারণ ঈশক্রিয়া। ঈশিক্রিয়াই কোন ঘটনাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। তবে আমরা যাকে ঈশক্রিয়া বলছি অর্থাৎ স্বপ্রনদিত কার্য (কারণ বিহীন)  তাও অপর কোন সূক্ষ্মতর কারণের কার্য। অর্থাৎ সমস্ত ঈশক্রিয়াই হল কোন এক পরম ইচ্ছার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। 
তবে এ বিশ্ব অবশ্যই দ্বিমাত্রিক নয়। তাই টান করা চাদরের উদাহরণ কেবল উপমা মাত্র। যে উপমাই আমরা গ্রহণ করি না কেন - বিশ্বের যেকোন প্রান্তে ঘটে যাওয়া সূক্ষ্মতম আলোড়নও বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব বিস্তার করে। বিশ্বব্যাপী বিরাজমান এই গুণাতীত সত্তাকেই আমরা স্বয়ং চৈতন্য স্বরূপা বলছি যা তরঙ্গবৎ সর্বব্যাপী বিদ্যমান। চৌম্বক বলরেখা যেমন কোন পদার্থের উপস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত হয় - যেকোন সামান্য ভরও বিশ্বব্যাপী চৌম্বক আবেশরেখা তথা বলরেখার আকৃতিকে পরিবর্তন করতে পারে - তেমনই চৈতন্য স্বরূপা এই নির্গুণ সত্তাও যেকোন শুভাশুভ কর্মের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রভাবিত হয়। যে প্রাণী যত বেশী এইরূপ চেতনাশক্তির অধিকারী তাকে তত বেশী চেতন যুক্ত আমরা বলে থাকি। আমরা এই চেতনা শক্তিকে বিশ্বব্যাপী তরঙ্গবৎ বিরাজমান বলে গ্রহণ করেছি। এটাই আমাদের স্বিকার্য। এই স্বিকার্যের সাহায্যেই আমরা পরবর্তীতে এই বিশ্বের নানা ঘটনাবলীকে ব্যাখ্যা করতে সমর্থ্য হব। 
অনুসিদ্ধান্তঃ
--> চৌম্বক আবেশ রেখার ন্যায় বিশ্বব্যাপী চৈতন্য যেকোন শুভাশুভ কর্মের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রভানিত হয়। যেমন করে কোন তন্ত্রে (system-এ) ঘটে যাওয়া যেকোন সূক্ষ্মতম শুভাশুভ কর্মও সমগ্র system বা তন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে।
--> তুমি হাসলে আমিও হাসি, তুমি কাঁদলে আমিও দুঃখ পাই, তুমি যখন আনন্দে উচ্ছল হয়ে ওঠো তা আমাকেও নাড়া দেয়। তরঙ্গবৎ চৈতন্যশক্তির অনুনাদই এর কারণ। 
--> ঈশক্রিয়া রূপে এই তরঙ্গের স্রষ্টা স্বয়ং প্রাণ, প্রতিটি প্রাণী তথা চেতনে যার প্রকাশ।