অহিংসা পরম ধর্ম?
বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। মনে হচ্ছে “অহিংসা
পরম ধর্ম” – এই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে – আমরা তথা হিন্দুরা কি চীরকাল মার খেয়েই যাব?
চোখ ফুটতেই দেখেছি ভারতের অভ্যন্তরে ও বাইরে নানা প্রেক্ষাপটে ভারতীয় সভ্যতার অসন্মান;
কখনও জাতীয় পতাকার বা ভারতীয় দেব-দেবীর স্থান হয় মেঝের পাপোছে, আবার কখনও শিল্পের নামে
দেব-দেবীর মণ্ডপ সাজানো হয় জুতো দিয়ে। ভারতীয় সভ্যতার অসন্মানের পালা বহুদিনের; বর্তমানে
এই অসন্মান আশ্রদ্ধা এবং লাঞ্ছনা শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে মানবতার সীমাকে অতিক্রম করে
বাধাহীন উন্মত্ত জন্তুর মতো নগ্নরূপে প্রকাশমান। আমরা কাঠ পুতুলের মতো শুধু দাঁড়িয়ে
দেখছি। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে – এই বাংলার বুকে মাযের লাঞ্ছনা সীমা ছড়িয়েছেয়ে – সদ্য
সমাপ্ত দূর্গোৎসবে। আমি নির্বাক, ভাষাহীন; তা বলে দুষ্কৃতীরা যেন আশ্বস্ত না হয় – অহিংসার
নপুংশকতা দেখে। “অহিংসা পরম ধর্ম” – এই শিক্ষা আমাদের দেওয়া হয়েছে সেই ছোট বেলা থেকে।
কিন্তু সত্যিই কি তাই? সত্যিই কি মানবতায় হিংসার স্থান নেই?
আমাদের দেব-দেবীদের প্রায় প্রত্যেকের হাতেই কোন না কোন অস্ত্র
বিদ্যমান; কেন? কেনই বা প্রতীক অস্ত্রে তাঁদের পূজা করা হয়? কেন? আসলে আমরা যা শিখে
এসেছি তা অর্ধ সত্য। অহিংসা পরম ধর্ম সেখানেই যেখানে প্রেম, পূর্ণ – মানবতা চরম। পুরুষার্থের
কথা স্মরণ করলে হিংসাকে স্থান দেওয়া হয়েছে ধর্মে – পুরুষার্থকে চরিতার্থ করেই – ধর্ম,
অর্থ, কাম ও মোক্ষ। কেন? যুধিষ্ঠির যুদ্ধবীর হয়েও মুমুক্ষু ছিলেন না? এরকম অনেক ক্ষত্রিয়ের
উদাহরণই আমরা পাই যাঁরা যুদ্ধ করেও মুমুক্ষু ছিলেন। ভগবানের বাণীই – যদি আমিও তোমাকে
হনন করতে আসি – আমাকেও আঘাত করা তোমার কর্তব্য।
তবে আজকের দিনে নিরাপরাধের উপর আস্ফালনেই ক্ষাত্র বীর্যের
প্রদর্শন হয়।
এই আস্ফালনকারী অমানবিক হিংস্র নগ্ন জন্তুর দল যখন সংখ্যায়
অনেক তখন আমাদের করণীয় সম্পর্কে ভেবে দেখার প্রয়োজন।
আমরা জানি – একতাই বল। বর্তমান ঘটনাবালীর পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন
রাষ্ট্রসংঘের দরজায় কড়াও নাড়ছে। কিন্তু এই আন্দোলন হচ্ছে বিক্ষিপ্ত। বাংলাদেশবাসী সংখ্যালঘু
জনতা আজ ভুক্তভোগী; একতাবদ্ধ না হয়ে তাদের উপায় নেই। এপার বাংলায় বিক্ষিপ্ত কিছু আন্দোলন;
যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট নয়। ভূমি – পৃথিবীর যে প্রান্তেরই হোক না কেন – মানুষের মানুষ
হবার অধিকার হরণ করার অধিকার কারও নেই – তা স্বদেশের হোক বা বিদেশের। আর বাংলাদেশ তো
আমার সোনার বাংলা..।
বাঙালী তথা ভারতবাসীর একতাবদ্ধ আন্দোলন – পুরুষার্থকে চরিতার্থ
করার লক্ষ্যেই – প্রত্যেকে স্ব স্ব ধর্ম অনুযায়ী তার বিকাশ ঘটাক। জীবনের উদ্দেশ্যকে
(অর্থ) এবং চাহিদাকে (কাম) সামনে রেখে মোক্ষকে পরমার্থ করে নিজ নিজ ধর্ম (স্বধর্ম)
পালনই হোক আমাদের ব্রত।
রাজনীতির ফাঁদে পড়া বাঙালী, শুধুমাত্র ট্রেনে চেপে চাকরী
করতে বা খুঁজতে যাওয়া বাঙালী আর তার্কিক অতি বুদ্ধিজীবী আত্ম হননকারী বাঙালীর স্বাভিমান
জাগুক সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে।
আর ব্রাহ্মণকে যেন শপথ নিতে না হয় – “নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব;
আনিব শান্তি শান্ত উদার”।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন