ভারতীয় সভ্যতার সংকট, সুরক্ষা
ও বিকাশ
যখন আমি এই প্রতিবেদনটি লিখতে
বসেছি, তখন প্রায় সপ্তাহ দুয়েক অতিবাহিত যখন নূপুর শর্মার তথাকথিত টিপ্পনীর পরিপ্রেক্ষিতে
ভারতের উপর বিশ্বের মুসলিম সমাজের কূট দৃষ্টি নিমজ্জিত; এবং তৎসঙ্গে ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদের
নামে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের হানি, অগ্নি সংযোগ, মানুষের হয়রানি ইত্যাদী সংবাদের
শিরোনামে।
নূপুর শর্মা কোনো
এক টিভি চ্যানেলে নবীজীর উদ্দেশ্যে কিছু কটাক্ষ করেছিলেন; তাও সেটি ছিল তাঁর প্রতিপক্ষ
কর্তৃক তাঁর ইষ্ট দেবতার উপর পৌণপৌণিক কটুক্তির পর। এরপর – দেশে ও বিদেশের মুসলিম সমাজ
ক্ষিপ্ত, অনেক মুসলিম দেশ কর্তৃক সাময়ীক ভাবে ভারতীয় পণ্যের বয়কট এবং একই ভাবে নূপুর
শর্মার কঠিন শাস্তির দাবীতে ভারত সরকারকে নত করানোর জন্য চাপ। উপরন্তু দেশের নানা স্থানে
নবীর অনুগামীদের পাথরবাজী, লুটতরাজ ইত্যাদী। এই দৃশ্য কোনো সভ্য সমাজের চিত্র নয়।পরিস্থিতি
এমন যে বাক স্বাধীনতা, মুক্ত চিন্তা আজ কারারুদ্ধ। এমন তর্ক দেওয়া যেতেই পারে যে, বাক
স্বাধীনতা – মুক্ত চিন্তার অর্থ অপরের বিশ্বাসে আঘাত দেওয়া নয়। কিন্তু ভেবে দেখার প্রয়োজন
যে, যে বিষয়ে আমি আহত সে বিষয়ে আমিও অপরকে আহত করেছি। সামগ্রিক ভাবে আমাদের বিকাশের
পথ রুদ্ধ হতে চলেছে।
কিন্তু কেন এমন
হল। বলা হয় – শিক্ষা চেতনার বিকাশ ঘটায়। যদি মনে করি মাদ্রাসা শিক্ষা মুসলমানদের একাংশকে
অন্ধকারে নিয়ে গেছে তাহলে অপরাংশ যারা মাদ্রাসা শিক্ষার বাইরে তারা কেন একই ভাবে এই
অস্থিরতায় অংশ নিচ্ছেন। আসলে আমাদের দেশের শিক্ষা খাতে অনেক ব্যয় হলেও, শিক্ষা ব্যবস্থার
প্রয়োগ সঠিক ভাবে হয় নি।
আমাদের উচিত এমন
এক সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা যা বহির্বিশ্বের যোগ্যতম মহানতাকে স্বীকার করার পাশাপাশি
আমাদের আগামী নাগরিকদের মধ্যে জাতি তথা রাষ্ট্র প্রীতি, রাষ্ট্র গরিমা, জাতীয় স্বাভীমান
জাগ্রত করবে। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের রাষ্ট্র চেতনা শুধু বইগুলোর মুখপত্রে
বর্ণিত সংবিধানের প্রস্তাবনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
জাতীয় বীরগাথার
এবং সভ্যতার গরীমা গাথার অবতারনাকে অনেকে গৈরিকীকরণ বলে কটাক্ষ করতেই পারেন। উত্তরে,
গৈরিকীকরণ হলে ক্ষতি কি? গৈরিক তো ত্যাগের প্রতীক। অনেকে বলবেন অতীত ভারতে অনেক হিংসাও
ঘটেছে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য কী – ত্যাগ, শান্তি ও বিকাশ। গেরুয়াকে তো আমাদের রাষ্ট্রধ্বজায়
সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে।
রাজ নৈতিক ও আর্থ
সামাজিক চাপে সমগ্র দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে উঠেছে এক দায় সারা শিক্ষা ব্যবস্থা। শুধুমাত্র
যেনতেন প্রকারে ভালো পরিসংখ্যান দেখিয়েই দায় মুক্তি। একটি শিশু একটি মাটির তাল। তাকে
যেভাবে তৈরি করবে সে সেভাবে তৈরি হবে। সুতরাং দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী কেবল
এবং কেবলমাত্র আমাদের ভ্রান্ত শিক্ষা ব্যবস্থা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অতি সত্বর
আমূল পরিবর্তন আবশ্যক।
কতকগুলি আশু কাঙ্খিত
পরিবর্তন এখানে লিপিবাধ্য করলামঃ
১)জাতীয় শিক্ষা
নীতির অধীনে সমগ্র দেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হবে তাতে জাতীয় গৌরব গাথা অধিক রূপে
অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
২)ভারতীয় শিল্প
সংস্কৃতির জ্ঞান ও বীর গাথা জাতীয় গৌরব গাথার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
৩) মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে
ঢেলে সাজাতে হবে যাতে-
i) ব্যক্তির ক্রমিক বিকাশের পরিসংখ্যান
ii) সামাজিক ক্রমিক বিকাশের পরিসংখ্যান
iii) জাতীয় ক্রমিক বিকাশের পরিসংখ্যান
এই তিনটি পরিসংখ্যানের
মধ্যে সুষ্পষ্ট সামঞ্জস্য থাকে।
৪) যেহেতু আমাদের
দেশ একটি বৈচিত্রময় দেশ এবং আমাদের সভ্যতার মূল সুর এক। এবং অন্তরের সেই সুরটি হল সনাতনী;
এবং এই দেশ কোনোদিন কাউকে ফিরিয়ে দেয় নি – সেহেতু সকল ভাবনার ধারাকে মর্যাদা দেবার
শিক্ষা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। তা শুধু সাধারণ শিক্ষায় নয় – সমস্ত রকম শিক্ষা ব্যবস্থাতেই
তা গ্রহণ করতে হবে। মাদ্রাসা থেকে শুরু করে মিশনারীস সব শিক্ষা ব্যবস্থাতেই শুধু পরধর্ম
সাহিষ্ণুতাই নয় পরধর্ম শ্রদ্ধার পাঠও প্রবর্তন করতে হবে।
৫) যেমন ছাত্র-ছাত্রীদের
মূল্যায়ন হবে তেমনই নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে – প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের, জাতীয়
পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি বোর্ডের মূল্যায়ন আবশ্যক।
৬) যেহেতু আমাদের
দেশ একটি বৈচিত্রময় দেশ এবং দেশমাতৃকা অনেক বীরের জননী সেহেতু যাঁরা জাতীয় স্তরে দেশের
জন্য অবদান রেখেছেন তারা দেশের যে অঞ্চল হতে বড় হয়েছেন, অঞ্চল ভিত্তিতে তাঁদের কাহিনী
স্কুল পাঠ্যের অন্তর্ভূক্ত করা হোক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন