বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৬

পরা-অপরা


পরা-অপরা



যে জ্ঞান আমাদের বাইরের জগতের সঙ্গে আমাদের পরিচিত করায় - তাই অপরা। আর যে জ্ঞান আমাদের পরম সত্যের দিশা দেয় তা হল পরা বিদ্যা। ভারতীয় শাস্ত্রে আত্মা তথা পরমাত্মাই হলেন পরম সত্য। তাই পরমাত্মাকে জানার জ্ঞানই হল পরা বিদ্যা। অর্থাৎ অধ্যাত্মবাদ তথা অধিবিদ্যাকেই বলা হয় পরা বিদ্যা। পরা অর্থ শ্রেষ্ঠা তথা উচ্চ এবং অপরা অর্থ নিম্ন। অনেক ক্ষেত্রে এই উচ্চ বা পরা বিদ্যাকে শুধু মাত্র বিদ্যা বলেই অভিহিত করা হয়েছে। অপর পক্ষে অবিদ্যা শাস্ত্র হল অপরা বিদ্যা। আমাদের বাস্তব জগতের জ্ঞানকে এই অবিদ্যা বা অপরা বিদ্যা বলে অভিহিত করা হয়। বাস্তব জগতের জ্ঞান যথা পদার্থ বিদ্যা থেকে স্থাপত্য বিদ্যা, কলা, সংগীত - যা কিছু এই মায়াময় জগতে মায়ার বিকাশের সহায়ক সবই এই অপরা বিদ্যা বা অবিদ্যা শাস্ত্রের অন্তর্গত। প্রাচীন ভারতবর্ষে বিদ্যা তথা পরা বিদ্যার সাথে সাথে অপরা বিদ্যা তথা অবিদ্যা শাস্ত্রও বিকশিত হয়েছিল। দিল্লীর কুতুবশাহি কমপ্লেক্সে রক্ষিত গুপ্তযুগের মরিচা বিহীন লোহার স্তম্ভ, প্রাচীন সোমনাথ মন্দিরের ঝুলন্ত বিগ্রহ( যা সবুক্তগিন ধ্বংস করেছিলেন) - সবই প্রাচীন ভারতে অপরা বিদ্যার অভূতপূর্ব নিদর্শনের সাক্ষী। আমাদের উপনিষদে পরা বিদ্যাকে যেমন পরম জ্ঞান লাভের উপায় রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে তেমনই অপরা বিদ্যাকে জাগতিক উন্নতি তথা বিকাশের সহায়ক রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। জগতের বিকাশের জন্য উভয় বিদ্যাই সমান ভাবে প্রয়োজনীয়। তাই আমাদের মাণ্ডুক্য উপনিষদে বলা হয়েছে "দ্বে বিদ্যে বেদিতব্যে পরা চাপরা "

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন